ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫ , ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সবাই মিলে রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুযোগ হয়েছে-আলী রীয়াজ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বদলিতে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য ১৭ অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আবেদন রাস্তায় অভিনেতাকে সিদ্দিককে গণপিটুনি কারিগরি শিক্ষার্থীরা যা শিখছেন, চাকরির বাজারে তার চাহিদা নেই -সিপিডি আগামী নির্বাচনে সীমিত পরিসরে হলেও প্রবাসীদের ভোটের প্রস্তুতি চলছে : সিইসি জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশকে উজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে গড়িমসি অপকর্ম বন্ধ করুন, নইলে বিএনপিকেও জনগণ ছুড়ে মারবে -নেতাকর্মীদের ফখরুল সভ্য হতে হলে প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে হবে : এনবিআর চেয়ারম্যান বইপ্রেমী এক ডিসির গল্প গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চিকিৎসাধীন অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ দুই বোন ই-৮ ভিসায় দক্ষিণ কোরিয়ায় গেলেন ২৫ কর্মী পুলিশের জন্য ১৭২ কোটি টাকায় কেনা হবে ২০০ জিপ সামাজিক সুরক্ষায় যুক্ত হচ্ছে আরও ৬ লাখ ২৪ হাজার উপকারভোগী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনে লিপ্ত থাকার অভিযোগ গ্যাস খাতে বছরে আর্থিক ক্ষতি বিলিয়ন ডলার নতুন লুকে নজর কাড়লেন ব্লেক লাইভলি
বান্দরবানে ২১৪টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে প্রশাসন

পাহাড়ধসের শঙ্কায় পাহাড়ি জনপদ

  • আপলোড সময় : ০১-০৭-২০২৪ ১০:২২:১৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০৭-২০২৪ ১১:৩৬:৪৮ অপরাহ্ন
পাহাড়ধসের শঙ্কায় পাহাড়ি জনপদ
দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছেগত কয়েক দিন ধরে প্রবল বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে কয়েক জেলায়বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছেবৃষ্টির কারণে পাহাড়ি জেলাগুলো বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের শঙ্কা থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছেএরই মধ্যে গতকাল সোমবার দুপুরে রুমা-বান্দরবান সড়কের দলিয়ান পাড়া এবং খুমী পাড়ায় মাটিধসে সড়কের ওপর জমে থাকায় এ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে
আবহাওয়া অধিদফতরের বান্দরবান জেলা কার্যালয়ের তথ্য মতে, বান্দরবানে ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে আর বর্ষণজনিত কারণে পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছেএদিকে প্রবল বৃষ্টি আর বন্যার শঙ্কায় বান্দরবান পার্বত্য জেলার সাতটি উপজেলায় ২১৪টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে প্রশাসনসাধারণ জনগণকে এ মুহূর্তে সতর্ক থাকার পাশাপাশি নিরাপদে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাবান্দরবান পৌরসভার মেয়র মো. সামসুল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিন ধরে বান্দরবানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছেএতে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নিয়ে সভা করা হয়েছে এবং কাউন্সিলরদের নিজ নিজ এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে বলার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে
তিনি আরো বলেন, পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে আমরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচিত করে সেখানকার প্রধান শিক্ষকদের আশ্রয়কেন্দ্রে আসা সবাইকে রাখার নির্দেশনা দিয়েছি এবং তাদের জন্য খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রেখেছিবান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, প্রবল বৃষ্টিতে বান্দরবানে নদীর পানি বেড়েছেআমরা পৌরসভা, জেলা তথ্য অফিস ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছিআশা করি, সবাই সচেতন থাকলে এ দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে
অন্যদিকে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে বাড়ছে জনদুর্ভোগবৃষ্টির কারণে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া লোকজন ঘর থেকে বাইরে যাচ্ছেন নাবৃষ্টির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছেমানুষ ঘর থেকে কম বের হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেকটা ভাটা পড়েছেবান্দরবান বাজারের ব্যবসায়ী বিমল কান্তি দাশ জানান, বান্দরবানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছেএতে অনেক কষ্ট হচ্ছেএদিকে বৃষ্টিতে বান্দরবানের সাংগু আর মাতামহুরী নদীর পানি বেড়ে গেছেএভাবে আর কয়েক দিন বৃষ্টি হলে নদী উপচে পানি বাড়িঘরে ঢুকতে পারে
এদিকে ভারত থেকে নেমে আসা উজানি ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে আবারও বাড়ছে সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানিপানি বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকায় সিলেট অঞ্চলে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছেপানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেয়া তথ্য মতে, সুরমা ও কুশিয়ারা, গোয়াইন, ডাউকিসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছেকুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ ও সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপরে অবস্থান করছেভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সুনামগঞ্জের সুরমা, যাদুকাটাসহ সব নদ-নদীর পানিইতোমধ্যে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে
অপরদিকে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে উপজেলার একাধিক বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উজানে বৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছেবিশেষ করে লোভা ও ডাউকি নদীর পানি ব্যাপক স্রোতে প্রবাহিত হচ্ছে ও বেড়ে চলেছেনতুন করে সিলেটে ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রাগোয়াইনঘাটের জাফলং মামার বাজারের ব্যবসায়ী আকবুল মিয়া জানান, জাফলংয়ের ডাউকি নদীর পানি অনেক কম ছিলওপর থেকে প্রবল বেগে পানি আসছেআজ সকাল থেকে পানি বাড়ছে
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন বলেন, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল (গত রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা) ৩৯.৬ মিলিমিটারশুধুমাত্র গতকাল সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৬৫ মিলিমিটারচেরাপুঞ্জিতেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছেচেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩১৩ মিলিমিটার
এদিকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সুনামগঞ্জের সুরমা, যাদুকাটাসহ সব নদ-নদীর পানিইতোমধ্যে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছেসেই সাথে ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রামীণ সড়কআর এতে আবারও বন্যা আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় সময় পার করছে ভাটি জেলার ২৫ লাখ মানুষ
গতকাল সকালে ঢলের পানিতে দ্বিতীয় ধাপে তলিয়ে গেছে পৌর শহরের উত্তর আরপিনগর, সাহেব বাড়ি ঘাট, পুরানপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাটএমনকি ঢলের পানিতে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দূর্গাপুর সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহরের সাথে আবারও তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক পথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছেসেই সাথে ছাতক, দোয়ারা বাজার, মধ্যনগরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় আবারও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নিম্নাঞ্চলের ৫ লাখেরও বেশি মানুষকেতবে এক মাসে দুবার পানি বাড়ায় নাজেহাল হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের জনজীবন
পৌর শহরের এহসান বলেন, বিছানার নিচে ইট দিয়েছিলাম গত সপ্তাহের বন্যায়ঘরের কর্দমাক্ত অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার আগেই আবার বন্যার কবলে পড়ে গেছিপানি যেভাবে বাড়ছে আবারও যদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে আমাদের অবস্থা বেহাল হয়ে যাবেতাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেনভারতেও বৃষ্টি হচ্ছে আবার সুনামগঞ্জে বৃষ্টিতো কমছেই নাইতোমধ্যে জেলা শহরের সাথে তাহিরপুর উপজেলার যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছেএখন সুনামগঞ্জে যেতে হচ্ছে নৌকায়বন্যায় আমাদের অবস্থা একদম নাজেহাল করে দিচ্ছে
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি ইতোমধ্যে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছেতবে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কমে গেলে সুনামগঞ্জ নদ-নদীর পানি কমে যাবেআর এখন যেহেতু পানি বাড়ছে সেক্ষেত্রে জেলায় স্বল্পমেয়াদি একটা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে
অপরদিকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরের প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছেএরই মধ্যে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করছেএ ছাড়া বেড়েই চলেছে জেলার অন্য নদ-নদীর পানিএতে নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছেকাউনিয়া ও ডালিয়া পয়েন্টে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)
পাউবোর বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, গতকাল দুপুর ১২টা থেকে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছেএর আগে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৬টায় ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ধরা হয়
অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে সোমবার দুপুরে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছেএর আগে সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৫১ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়এ পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে বিপৎসীমা অতিক্রম করে
এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর জেলার কাউনিয়া, পীরগাছা ও গংগাচড়া উপজেলার তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছেতিস্তা নদীতে পানি বাড়া-কমায় ভাঙনের মুখে পড়েছে বিভিন্ন এলাকাবেশকিছু চরাঞ্চলের বাড়িঘরের চারপাশে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছেতলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়কডুবে গেছে ঐসব এলাকার সবজিক্ষেত
পাউবো কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় ভাঙনকবলিত পরিবারের অনেকে নিরুপায় হয়ে বসতি সরিয়ে নিচ্ছেজরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গংগাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল সূর্যমুখী কারী মাদরাসা, চিলাখাল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ, উত্তর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের হুমকিতে রয়েছেএ ছাড়া কোলকোন্দ ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ৫ শতাধিক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছেসেখানে নিম্নাঞ্চলে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট
গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, তিস্তা নদী এলাকায় বন্যা ও ভাঙনের বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছিকোথাও কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে
এ বিষয়ে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতিবছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিস্তা খনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারেসেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারেসারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারেগত ২৪ ঘণ্টায় গতকাল সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রংপুর বিভাগের আট জেলায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় সোমবার কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছেপরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডালিয়া ব্যারাজের সব গেট খুলে রাখা হয়েছেএ ছাড়া ভাটি অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত পাহাড়ি ঢলের কারণে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, ঘাঘট, করতোয়া, ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছেতবে এখন পর্যন্ত বন্যার আভাস পাওয়া যায়নিতারপরও সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেয়া আছে, যাতে বন্যায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে
অপরদিকে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সাঙ্গু নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছেফলে আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদেরএরই মধ্যে নিজেদের আবাসস্থল থেকে গবাদিপশু উঁচু স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন অনেকেদিনের বেলায় যেমন তেমন হলেও বৃষ্টির কারণে রাতের বেলায় অনেকটা নির্ঘুম সময় কাটে সাঙ্গু তীরের মানুষেরগতকাল সোমবার সরেজমিনে জেলা সদরের সাঙ্গু সেতু সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায়, স্থানীয়রা গবাদিপশু সরিয়ে উঁচু স্থানে নিচ্ছেন
স্থানীয়রা জানান, গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যার কথা এখনো ভুলতে পারেননি তারাটানা বৃষ্টিপাতে এখন নতুন করে চিন্তায় আছেনএর মধ্যে টানা ৭২ ঘণ্টার বৃষ্টি তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেবৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাবেন
স্থানীয় বাসিন্দা মো. জসিম বলেন, এখন পানি বৃদ্ধির অবস্থা ভয়াবহগেল বছরের ক্ষতি এখনো কাটেনিটানা বৃষ্টিপাতে এখন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছেএখানে থাকা সম্ভব নয়, পানির ভয়ে এখন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে
শহীদুল ইসলাম নামে আরেকজন জানান, এখানে আমরা যারা নদীর পাড়ে আছি তারা খুবই আতঙ্কে আছিখুবই কষ্টে আছি, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হবে
বান্দরবান আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন কুমার মণ্ডল জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছেবৃষ্টিপাত আগামী আরো কয়েকদিন হওয়ার সম্ভাবনা আছেবৃষ্টিপাতের কারণে সাঙ্গু নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে, পাহাড় ধসের শঙ্কাও আছে
এদিকে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি এলাকা থেকে সরে যেতে বান্দরবান পৌরসভার পক্ষ হতে জনসচেতনতায় মাইকিং অব্যাহত আছে
বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মো. শামসুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে পৌর এলাকায় ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছেপাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসতে বলা হয়েছেকেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আসলে তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছেএছাড়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের জরুরিভাবে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ